প্রাচীন যুগ চর্যাপদ

প্রাচীন যুগ চর্যাপদ

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন চর্যাপদ। চর্যাপদ সহজিয়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সাধন সঙ্গীত। চর্যাপদ মূলত গানের সংকলন। পাল বংশের আমলে চর্যাপদের বিকাশ ঘটে। চর্যাপদ রচনাকালে বাঙালির জীবন ছিল কৃষিভিত্তিক। ১৯০৭ (১৩১৪ বঙ্গাব্দ) সালে মহামহোপাধ্যায় ডক্টর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামক পুঁথিটি আবিষ্কার করেন। চর্যাপদের সাথে ‘ডাকার্ণব’ ও ‘কৃষ্ণপাদের দোহা’ নামে পুঁথি আবিষ্কৃত হয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে (১৩২৩ বঙ্গাব্দ) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হতে “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা” নামে প্রকাশিত হয়।
চর্যাপদের রচনাকাল:
– পাল বংশের শাসনামলে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে চর্যাপদ রচিত হয়।
– ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, চর্যাপদের রচনাকাল ৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ।
– ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়সহ অধিকাংশের মতে, ৯৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ।
– চর্যাপদের ভাষা:
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের ভাষাকে সন্ধ্যা ভাষা/সান্ধ্য ভাষা/আলো আঁধারি ভাষা (খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না) বলে অভিহিত করেছেন। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ সালে ‘বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ’ (ঙৎরমরহ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ ঃযব ইবহমধষর খধহমঁধমব) গ্রন্থে চর্যাপদের ভাষা নিয়ে প্রথম আলোচনা করেন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, চর্যাপদের ভাষা বঙ্গ কামরূপী। এটিতে হিন্দি, অসমীয়া, উড়িয়া, মৈথিলী ও বাংলা মোট ৫টি ভাষায় সংমিশ্রণ আছে। চর্যাপদের ভাষা মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা।

চর্যাপদের কবি ও পদসংখ্যা:
* ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, পদসংখ্যা *৫০টি এবং ড. সুকুমার সেনসহ অধিকাংশের মতে, পদসংখ্যা- ৫১টি।
* আবিষ্কৃত পদসংখ্যা- সাড়ে ৪৬টি।
* ২৩ নং পদ খন্ডিত আকারে পাওয়া গেছে এবং ২৪, ২৫ ও ৪৮ নং পদ পাওয়া যায়নি।
* ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, চর্যার পদকর্তা- ২৩ জন এবং ড. সুকুমার সেনসহ অধিকাংশের মতে, চর্যার পদকর্তা-২৪ জন।
* চর্যাপদ রচয়িতাদের ‘মহাসিদ্ধ’ বলা হয়।
* ‘পা’ হলো চর্যাপদের পদকর্তার সম্মানসূচক উপাধি।
* চর্যাপদের কবিদের পদসংখ্যা: কাহ্নপা- ১৩টি, ভুসুকুপা- ৮টি, সরহপা-৪টি, কুক্কুরীপা- ৩টি, লুইপা- ২টি, শান্তিপা- ২টি এবং অবশিষ্ট পদকর্তাগণ একটি করে পদ রচনা করেন।
* লাড়ীডোম্বীপার কোন পদ পাওয়া যায়নি।
* চর্যাপদের প্রথম পদ হলো- কাআ তরুবর পঞ্চবি ডাল/চঞ্চল চীএ পইঠো কাল এবং এ পদের রচয়িতা ‘লুইপা’। তাকে বাংলা সাহিত্যের ‘আদিকবি’ বলা হয়। প্রাচীন যুগ চর্যাপদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top