loader image

বাস্তবতার প্রেম ও ধৈর্য্য

বাস্তবতার প্রেম ও ধৈর্য্য

লিখেছেন: মেঘমন থমথম

আকাশ এবং রিমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। প্রথমদিকে তারা শুধু পরিচিত ছিল। ক্লাসে বসে সামান্য আলাপ, গ্রুপ প্রজেক্টে সহযোগিতা—সবই শুরু করেছিল ছোট্ট বন্ধুত্ব। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে গভীর বোঝাপড়া তৈরি হলো। তারা একে অপরকে শুধু বন্ধু হিসেবে নয়, বরং জীবনের সমঝোতা হিসেবে দেখতে শুরু করেছিল।

শুরুর দিকে প্রেমের অনুভূতি রোম্যান্টিক গল্পের মতো সরল ছিল। তারা হেসে খেলে, ছোট ছোট মেসেজ পাঠাত, একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাত। তবে বড় বাস্তবতা তাদের পরীক্ষা করতে শুরু করল। আকাশের পরিবার খুব নিয়মকানুনে বাঁধা, সে সবসময় ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। রিমি শহরের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিল, এবং সে চাকরি, পড়াশোনা এবং পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকত।

প্রথম বড় পরীক্ষা আসে যখন বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হয়। আকাশ ঢাকায় চাকরি পায়, আর রিমি চট্টগ্রামে। দূরত্ব তাদের মাঝে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব তৈরি করতে শুরু করে। কখনও কখনও তারা ফোনে কথা বলত, আবার কখনও ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে। দূরত্বের কারণে তর্ক এবং অনিশ্চয়তা জন্মায়।

একদিন, রিমি হতাশ হয়ে বলল, “আমরা কি সত্যিই একে অপরের জন্য তৈরি? আমি ভয় পাচ্ছি দূরত্ব আমাদের আলাদা করে দেবে।” আকাশ চুপচাপ তার হাত ধরল। “দূরত্ব কোনো বাধা নয়, যদি আমরা বোঝাপড়া এবং বিশ্বাস রাখি। আমি চাই আমরা একে অপরকে সুযোগ দিই।”

দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তারা ছোট ছোট সময়কে মূল্য দিতে শিখল। সকালে পাঁচ মিনিটের ফোন কল, লাঞ্চ ব্রেকে মেসেজ, সপ্তাহে একবার ভিডিও কল—এসবই তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখল। তারা বুঝল, প্রেম মানে শুধু অনুভূতি নয়; এটি হলো ধৈর্য, বোঝাপড়া, এবং একে অপরের জীবনের প্রতি সমর্থন।

কিন্তু বাস্তব জীবনের চাপ কখনও থামেনি। চাকরির দায়িত্ব, পারিবারিক চাপ, এবং দৈনন্দিন ব্যস্ততা তাদের মাঝে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি করেছিল। আকাশ একদিন রিমিকে ফোনে বলল, “আমার অফিসের কাজ এত ব্যস্ত, আমি তেমন সময় দিচ্ছি না। আমি দুঃখিত।” রিমি শান্তভাবে বলল, “আমিও ব্যস্ত। আমরা হয়তো দেখা করি না, কিন্তু আমাদের বোঝাপড়া থাকলেই যথেষ্ট।”

বছর কেটে গেল। তারা দু’জনেই পেশাগতভাবে স্থিতিশীল হলো। আকাশের পরিবার রিমিকে দেখল এবং তার ধৈর্য, সততা এবং ভালোবাসা দেখে সম্মতি দিল। তাদের প্রেম শুধুই রোমান্স নয়; এটি ছিল সহনশীলতা, বোঝাপড়া এবং বাস্তব জীবনের চাপ মোকাবেলার ক্ষমতা।

একদিন আকাশ রিমিকে একটি ছোট্ট কফি শপে নিয়ে গেল। “দেখো,” সে বলল, “আমরা যেভাবে ছোট ছোট চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি, তা আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে। আমাদের প্রেম শুধুই অনুভূতি নয়; এটি বোঝাপড়া, সমর্থন, এবং একে অপরের জন্য ধৈর্য।” রিমি হাসি দিয়ে বলল, “আমরা হয়তো রোমান্টিক সিনেমার মতো গল্পে নেই, কিন্তু আমাদের গল্প আরও বাস্তব, আরও শক্তিশালী।”

এরপর তারা চট্টগ্রাম এবং ঢাকার দূরত্ব ভেঙে একসাথে থাকার পরিকল্পনা করল। নতুন শহরে নতুন জীবন শুরু হলো। তারা শিখল—যে কোনো সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস এবং বোঝাপড়া। ছোট ছোট দ্বন্দ্ব, তর্ক, এবং সমস্যার মধ্যেও যদি প্রেম থাকে, তবে এটি টিকে থাকে।

রিমি কখনও হতাশ হতো না, কারণ সে জানত আকাশ পাশে আছে। আকাশও জানত, রিমি তার জীবনের সবচেয়ে বড় সমর্থন। তারা বুঝল, প্রেম মানে শুধু ভালো লাগা নয়; এটি হলো একে অপরের জীবনের অংশ হওয়া, ভালো এবং খারাপ সময়ে পাশে থাকা।

বছরের পর বছর কেটে গেল। তারা এখন সফলভাবে জীবন কাটাচ্ছে। তাদের প্রেম চিরস্থায়ী হয়েছে। বাস্তব প্রেম কখনও সরল বা সহজ হয় না। কখনও কখনও ব্যস্ততা, দূরত্ব, বা পারিবারিক চাপ সমস্যার জন্ম দেয়। তবে যারা একে অপরকে বোঝে, বিশ্বাস করে, এবং চেষ্টা করে—তাদের প্রেম সবসময় টিকে থাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মন্তব্যসমূহ (0)

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Scroll to Top