Preloader
  • Follow Us On :
  • img
  • img
  • img
img

বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ

ভাষা
মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম ভাষা। ভাষা হচ্ছে- ভাব প্রকাশের মাধ্যম।
মানুষের মুখে উচ্চারিত অর্থবোধক ও মনোভাব প্রকাশক ধ্বনি সমষ্টিকে ভাষা
বলে। সৃষ্টির ইতিহাসে : আগে ভাষা- পরে ব্যাকরণ। ভাষার অন্যতম
বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- অর্থদ্যোতকতা, মানুষের কন্ঠনিঃসৃত ধ্বনি এবং
জনসমাজে ব্যবহার যোগ্যতা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে বস্তু ও ভাবের জন্য
বিভিন্ন ধ্বনির সাহায্যে শব্দের সৃষ্টি করেছে। সেসব শব্দ মূলত নির্দিষ্ট
পরিবেশে মানুষের বস্তু ও ভাবের প্রতীক (Symbol) মাত্র।

বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ
পৃথিবীর ভাষাগুলোকে ইন্দো-ইউরোপীয়, চীনা-তিব্বতীয়, আফ্রিকীয়,
সেমীয়-হেমীয়, দ্রাবিড়ীয়, অস্ট্রো-এশীয় প্রভৃতি ভাষা পরিবারে ভাগ করা হয়ে
থাকে। ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি, স্প্যানিশ, রুশ, পর্তুগিজ, ফারসি, হিন্দি,
উর্দু, নেপালি, সিংহলি প্রভৃতি ভাষার মতো বাংলা ভাষাও ইন্দো-ইউরোপীয়
ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার শাখা দুটি। যথা- কেন্তুম ও
শতম। কেন্তুম ভাষা হতে কতগুলো ভাষার সৃষ্টি হয়। যেমন- গ্রীক, ইতালিক
(Italic), টিউটোনিক, হিত্তিক ও তুখারিক। হিত্তিক ভাষা ১৫০০ পূঃ খ্রিষ্টাব্দে
এশিয়া মাইনরে বর্তমান ছিল। তুখারিখ ভাষা চীনীয় তুর্কিস্থানে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যমান ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের আঞ্চলিক ভাষাগুলোর আদিম উৎস
অনার্য ভাষা। আর্যদের (ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষার একটি দল) আগমনের পর
অনার্য ভাষা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। আর্যদের ভাষার নাম প্রাচীন ‘বৈদিক
ভাষা’। অনেকে বলেন, সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু
আধুনিক পন্ডিতগণ বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের দুহিতা বলে মেনে নেন নি।
আর্যভাষা তিনটি স্তরে বিভাজিত।

যথা-
ক) প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা : বৈদিক ও সংস্কৃত;
খ) মধ্যভারতীয় আর্যভাষা : পালি, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ
গ) নব্যভারতীয় আর্যভাষা : বাংলা, উড়িয়া, হিন্দি, মারাঠি ইত্যাদি।
বাংলা ভাষার মূল উৎস প্রাকৃত ভাষা। ‘প্রাকৃত’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো
‘স্বাভাবিক’ এবং ভাষাগত অর্থ- জনগণের ভাষা। প্রাকৃত ভাষা থেকে দুটি
ভাষা সৃষ্টি হয়েছে- একটি ‘পালি’, অন্যটি ‘অপভ্রংশ’। ‘অপভ্রংশ’ কথাটির
অর্থ বিকৃত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অপভ্রংশের কাছে প্রত্যক্ষভাবে ঋণী।
অপভ্রংশ ভাষা থেকে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে উৎপত্তি লাভ করে আমাদের
‘বাংলা ভাষা’।

বাংলা ভাষা উদ্ভবের ইতিহাস সম্পর্কে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র মতামত,
অসমিয়া
গৌড়ী প্রাকৃত (মাগধী প্রাকৃতের প্রাচ্যতর রূপ) → গৌড় অপভ্রংশ → বঙ্গ-কামরূপী
প্রাচীন প্রাচ্য  প্রাচীন ভারতীয় আর্য কথ্য  প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা  ভারতীয়
বাংলা ভাষা
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা (৫০০০-৩৫০০ খ্রি. পূর্বাব্দ) → শতম্ ভাষা → আর্য ভাষা
আনুমানিক এক হাজার বছর আগের পূর্ব ভারতীয় প্রাকৃত ভাষা থেকে
বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র মতে বাংলা ভাষার
উদ্ভব ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে (সপ্তম শতকে)। আর ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
৯৫০ খ্রিষ্টাব্দকে (দশম শতককে) বাংলা ভাষার উদ্ভবকাল বলে মনে
করেন। বাংলা ভাষার নিকটতম আত্মীয় অহমিয়া (অসমিয়া) ও ওড়িয়া।
ধ্রæপদী ভাষা সংস্কৃত এবং পালির সঙ্গে বাংলা ভাষার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশের জীবনযাত্রার প্রায় সবক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারের বিষয়টি
সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা প্রদেশের
অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা বাংলা।