বিদেশে উচ্চশিক্ষা সহায়ক পরীক্ষা
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে অসংখ্য শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে পাড়ি জমাচ্ছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে প্রয়োজন হয় কিছু পরীক্ষার সনদ। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়ার দু-তিন বছর আগে থেকে উচ্চশিক্ষার সহায়ক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
স্যাট:
স্যাটের পুরো নাম স্কলাস্টিক অ্যাপটিটিউড টেস্ট। বিষয়ভিত্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা সনদ হিসেবে স্যাট স্কোর জমা দিতে হয়। উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে পড়তে যাওয়ার জন্য যাঁদের প্রথম পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা, স্যাট তাঁদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। ক্রিটিক্যাল রিডিং, গণিত ও ইংরেজি—এ তিন বিষয়ের ওপর ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি অংশে ৮০০ করে ২৪০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। স্যাট পরীক্ষায় সর্বনিম্ন স্কোর ৬০০ এবং সর্বোচ্চ ২৪০০।
স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৃত্তি পেতে হলে সর্বনিম্ন ২০০০ স্কোর থাকা গুরুত্বপূর্ণ। অফিশিয়াল স্যাট স্টাডি গাইড, ব্যারন্স, প্রিন্সটন রিভিউ, কাপলান প্রভৃতি বই থেকে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। এসব বই ঢাকার নীলক্ষেতে পাওয়া যায়।
তা ছাড়া আমেরিকান সেন্টারের রয়েছে স্যাট প্রস্তুতিমূলক বইয়ের চমৎকার সংগ্রহ। বাংলাদেশে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য খরচ হবে ১২ হাজার টাকার মতো। তবে প্রায় সময় ফি হালনাগাদ করা হয়।
আইইএলটিএস: আইইএলটিএসের পুরো নাম ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম। আন্তর্জাতিকভাবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা পরিমাপের জনপ্রিয় পরীক্ষা হলো আইইএলটিএস। ইংরেজিভাষী প্রায় সব দেশে আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করে থাকে।
পরীক্ষায় ইংরেজি ভাষার চারটি দক্ষতা (লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং) যাচাই করা হয়। প্রতিটি সেকশনে ১ থেকে ৯-এর মধ্যে স্কোর করা হয়। আর চার সেকশনের স্কোর যোগ করে গড় করা হয়, যাকে ব্যান্ড স্কোর বলে। মাস্টার্স এবং পিএইচডির জন্য এই স্কোর সনদ প্রয়োজন হয়।
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য ব্যান্ড স্কোর সর্বনিম্ন ৬.৫-এর প্রয়োজন হয়। বৃত্তি পাওয়ার জন্য ৭.৫ অথবা ৮ স্কোর থাকা গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল অথবা আইডিপিতে (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মূলত একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং (জিটি) এই ক্যাটাগরিতে পরীক্ষা দেওয়া যায়।
একাডেমিক কাজের জন্য একাডেমিক পরীক্ষা দিতে হবে। প্রস্তুতির জন্য সবচেয়ে ভালো কেমব্রিজ সিরিজের গাইড (৭-১৩)। এ ছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল থেকে বিনা মূল্যে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। আইইএলটিএস পরীক্ষার সব তথ্য, প্রস্তুতি ও পরামর্শ ব্রিটিশ কাউন্সিলে পাওয়া যায়। আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য খরচ হবে প্রায় ২৩ হাজার টাকা। তবে ফি প্রায় সময় হালনাগাদ করা হয়।
টোয়েফল:
আইইএলটিএসের মতো এটি ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা পরিমাপের পরীক্ষা। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানিসহ অনেক দেশে টোয়েফল স্কোর গ্রহণ করা হয়। টোয়েফলের পুরো নাম টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ। এখানে লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং—চারটি দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়। ১২০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। সর্বনিম্ন ৮০ স্কোর থাকলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়। তবে হার্ভার্ড, অক্সফোর্ডের মতো বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে হলে সর্বনিম্ন ১০৯ স্কোর থাকা গুরুত্বপূর্ণ। টোয়েফল পরীক্ষার জন্য ওয়েবসাইট -এ রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। ইটিএসের আঞ্চলিক কেন্দ্রেও রেজিস্ট্রেশন করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত আমেরিকান সেন্টারের স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার সেন্টারে গিয়ে টোয়েফলসহ উচ্চশিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
জিআরই:
গ্র্যাজুয়েট রেকর্ডস এক্সামিনেশনসের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো জিআরই। যুক্তরাষ্ট্রের এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস (ইটিএস) এর তত্ত্বাবধায়ক। ইটিএস অনুমোদিত নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্রে কম্পিউটারের মাধ্যমে এ পরীক্ষা দিতে হয়। ছয়টি অংশে বিভক্ত এ পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। এ পরীক্ষার প্রধান তিনটি অংশ হলো—অ্যানালাইটিক্যাল রাইটং, ভারবাল রিজনিং ও কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার জন্য জিআরই গুরুত্বপূর্ণ। এটির স্কোরের ওপর ভিত্তি করে বৃত্তি বা গবেষণার সুযোগ দেয়। এ পরীক্ষায় মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ব্যবসায় শিক্ষা—সব অনুষদের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারেন। পরীক্ষার জন্য প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়।
জিম্যাট:
গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্টকে জিম্যাট বলা হয়। এ পরীক্ষার স্কোর শুধু ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজন হয়। এটি চারটি অংশে বিভক্ত থাকে। তা হলো: অ্যানালাইটিক্যাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট একটি প্রশ্ন, ভারবাল ৩৬টি, কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং ৩১টি এবং ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং ১২টি প্রশ্ন। পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ৮০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭০০ নম্বর পেলে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া যায়। বিদেশে উচ্চশিক্ষা সহায়ক পরীক্ষা