মহাবিশ্ব, নক্ষত্র (Stars), সৌরজগৎ (Solar System), আহ্নিক গতি (Rotation), বার্ষিক গতি (Revolution), সূর্য গ্রহণ (Revolution), জোয়ার ভাটা (High Tide and Low Tide)
মহাবিশ্ব
এই পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্র ধূলিকণা বা জলীয় বাষ্প থেকে শুরু করে পুরো পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ধূমকেতু, উল্কা, মহাকাশ ইত্যাদি সবকিছুকে একত্রে বলা হয় মহাবিশ্ব। অর্থাৎ মানুষ আজ পর্যন্ত যা আবিষ্কার করতে পেরেছে এবং যা পারেনি তার সবকিছু নিয়েই এই
মহাবিশ্ব। মহাবিশ্ব সৃষ্টি সংক্রান্ত বিজ্ঞানকে বলা হয় ঈড়ংসড়ষড়মু বা বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব।
নক্ষত্র (Stars)
যে সব জ্যোতিষ্কের নিজের আলো ও তাপ আছে তাদেরকে নক্ষত্র বলে। রাতের আকাশে অনেক আলোক বিন্দু মিট মিট করে জ্বলতে দেখা যায়, এগুলো নক্ষত্র।
পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র সূর্য।
সূর্য ছাড়া পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র- প্রক্সিমা সেন্টরাই। পৃথিবী
থেকে প্রক্সিমা সেন্টরাই নক্ষত্রের দূরত্ব প্রায় ৪.২ আলোকবর্ষ।
আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র- লুব্ধক।
সবচেয়ে বৃহত্তম নক্ষত্র- ভি ডাব্লিউ ক্যানিস ম্যাজোরিস।
সৌরজগৎ (Solar System)
সৌরজগৎ বলতে সূর্য এবং এর সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সকল মহাজাগতিক বস্তুকে বোঝায়। মহাকাশে গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু, গ্রহাণু প্রভৃতি মহাকর্র্ষ শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণের মাধ্যমে যে বিরাট জগৎ গড়ে তুলেছে তাকে সৌরজগৎ বলে। ৮টি গ্রহ এবং ১৬২ টি উপগ্রহ নিয়ে এই সৌরজগৎ গঠিত।
দিন রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি
পৃথিবী নিজ অক্ষের সাথে ৬৬.৫° কোণে হেলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর একটি পূর্ণ ঘূর্ণনে পৃথিবীর চারটি অবস্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অবস্থানগুলো হলো-
২১ শে মার্চ ও ২৩ শে সেপ্টেম্বর : এই দুইদিন সূর্য নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ সমানভাবে সূর্যের আলো পায়। তাই এই দুইদিন পৃথিবীর দুই গোলার্ধে দিন রাত্রি সমান থাকে। এদেরকে বিষুব (Equinox) দিন বলা হয়। এই সময় ২১ শে মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল থাকে। তাই একে বসন্ত বিষুব (ঠবৎহধষ ঊয়ঁরহড়ী) বলা হয়। ২৩ শে সেপ্টেম্বর উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল থাকে। তাই একে শারদ বিষুব
(Vernal Equinox) বলা হয়। ২১ শে জুন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি হেলে থাকে। এ সময় সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে আলো দেয়। তাই ২১শে জুন উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন এবং ছোট রাত হয়। ২২ শে ডিসেম্বর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি হেলে থাকে। এ সময় সূর্য মকরক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে আলো দেয়। তাই ২২ শে ডিসেম্বর দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন এবং ছোট রাত হয়।
আহ্নিক গতি (Rotation)
পৃথিবী তার নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে ১৬১০ কিলোমিটার/ঘণ্টায় ঘুরছে। পৃথিবীর তার নিজ অক্ষের চারদিকে এই নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তনকে আহ্নিক গতি বলে।
আহ্নিক গতির ফলাফল
১. দিন রাত্রির সৃষ্টি হয়। ২. বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রার তারতম্য হয়।
৩. বায়ু প্রবাহ ও সমুদ্র স্রােতের সৃষ্টি হয়।
৪. জোয়ার ভাটা হয়। ৫. সময় গণনা বা নির্ধারণ করা যায়।
বার্ষিক গতি (Revolution)
সূর্যের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর অবিরাম ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের চারদিকে আবর্তন করছে। পৃথিবীর এই গতিকে বার্ষিক গতি বলে। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর ১ বছর সময় লাগে। বার্ষিক গতির ফলাফল :
১. দিন-রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি হয়। ২. ঋতু পরিবর্তন হয়।
সূর্য গ্রহণ (Revolution)
যখন পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য একই সরল রেখায় অবস্থান করে তখন সূর্যের আলো চাঁদের উপর এসে পড়ে এবং চাঁদের ছায়া পৃথিবীর উপর পড়ে। ফলে পৃথিবীর যে অংশে চাঁদের ছায়া পড়ে সেই অংশ থেকে কিছুক্ষণের জন্য আংশিক বা পরিপূর্ণ সূর্য দেখা যায় না। এ ঘটনাকে সূর্য গ্রহণ বলে। অমাবস্যায় সূর্য গ্রহণ হয়ে থাকে।
চন্দ্র গ্রহণ (Lunar Eclipse)
যখন চন্দ্র, পৃথিবী এবং সূর্য একই সরল রেখায় থাকে তখন সূর্যের আলো এসে পৃথিবীতে পড়ে এবং পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে। ফলে কিছুক্ষণের জন্য আংশিক বা পরিপূর্ণ চন্দ্র দেখা যায় না। এ ঘটনাকে চন্দ্র গ্রহণ বলে। পূর্ণিমায় চন্দ্র গ্রহণ হয়ে থাকে।
জোয়ার ভাটা (High Tide and Low Tide)
সমুদ্র এবং উপক‚লবর্তী নদীর জলরাশি প্রতিদিনই নির্দিষ্ট সময়ে ফুলে উঠে এবং কিছুক্ষণ পরে তা ধীরে ধীরে নেমে যায়। জলরাশির এই নিয়মিত ফুলে উঠাকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। জলরাশির একই স্থানে প্রতিদিন দুইবার জোয়ার হয় এবং দুইবার ভাটা
হয়। দুটি জোয়ারের বা দুটি ভাটার মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট এবং একটি জোয়ার ও একটি ভাটার মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট। দুটি কারণে জোয়ার ভাটা হয়।
ক. চন্দ্র ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব।
খ. পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তি।
ক. মুখ্য জোয়ার: পৃথিবীর উপর চন্দ্রের আকর্ষণ সূর্য অপেক্ষা প্রায় দ্বিগুণ। চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে আবর্তনকালে পৃথিবীর যে অংশ চন্দ্রের নিকটবর্তী হয় সেই অংশের জলরাশি চন্দ্রের দিকে ফুলে উঠে। এটাই হলো মুখ্য বা প্রত্যক্ষ জোয়ার।
খ. গৌণ জোয়ার: যেখানে মুখ্য জোয়ার হয় তার বিপরীত পার্শ্বে পৃথিবীর জলরাশির উপর মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব কমে যায় এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়। এতে চারদিক হতে ঐ স্থানে পানি এসে একটি হালকা জোয়ারের সৃষ্টি করে। এভাবে চন্দ্রের বিপরীত দিকে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ বা পরোক্ষ জোয়ার বলে।
